নূর হোসেনকে নিয়ে কিছু কথা
সারাদিন ধরে ভাবলাম : শহীদ নুর হোসেনের স্মৃতির স্বরণে কি বলতে পারি আমি? বড় বড় বাক্য দিয়ে কাব্য রচনা করার ক্ষমতা বা ইচ্ছা, দুটোর একটিও নেই। ইচ্ছে নেই কারণ সন্দেহ হয় যে ২০ বছরের ইতিহাসের কলঙ্কধ্বণির মাঝে "গণতন্ত্র", "স্বৈরাচার" এই প্রকারের শব্দগুলো অনেকটা ফাটা কলশের মতো শোনাবে। স্মৃতিচরণ করারও ক্ষমতা নেই। বয়স তখন এতই কম ছিল যে সত্যি বলতে সেই দিনগুলোর ঘটনার বেশী কিছু মনে নেই। শুধু একটি অত্যন্ত প্রিয় স্মৃতি ছাড়া। সেটা পরে বললেও চলবে।
তবে সারাদিন ভেবেচিন্তে একটি সিদ্ধান্ত নিলাম : পোস্টটা করবো বাংলায় । এর পিছনে কারণটা নিজেও ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না। অনেকদিন ধরে বাংলায় লেখালেখি করি না। আশা করি বানান ও অন্যান্য ভুল শব মাফ করে দেবেন।
শুরুতে বলি আপনাদের দু-তিন বছর আগের কথা। ঢাকার রাস্তায় আমার প্রিয় কাজটি করছি : গন্তব্যহীন, উদ্দেশ্যহীন ঘুরে বেড়ানো বন্ধুদের সাথে। কিছুটা পায় হেটে, কিছুটা রিক্শা চড়ে। যেদিকে চোখ যায়, মন যায়, সেদিকে আমরাও ছুটি।
কিভাবে যেন এসে পরলাম জিরো পয়েন্টের কাছে। যদি বলি যে তখনই মনে পরে গিয়েছিল নূর হোসেনের কথা, তাহলে মিথ্যে বলা হবে। স্কুলে শিখতে হয়েছিল আমাদের ইতিহাসের অনেক নায়ক, বীরপুরুষের কথা। তাদের নামে ঢাকায় রাস্তা, চত্তর, হাস্পাতাল, স্কুল, মসজিদ, স্টেডিয়াম আছে। এমনকি আমাদের ইতিহাসের খলনায়কদের নামেও একটি দুটি অট্টালিকা পাওয়া যায় আমাদের দেশে। নূর হোসেনের নামেও রয়েছে একটি চত্তর।
তবে কি করূণ অবস্থা তার! দেখেই বোঝা যায় যে আগে যা ছিল জিরো পয়েন্ট, সেটাই আজ হয়ে দারিয়েছে নূর হোসেনের স্মৃতিশৌধ। দেখে বোঝা যায় যে কোনো শিল্পী নতুন করে এটা রিডিজাইন করেনি। দেখে বোঝা যায় যে রাজুক এর যত্ন্যের পিছু বেশি খরচ করে না।
তবে আরও লজ্জা লাগলো নিজের কথা চিন্তা করে। নিজেকে একটু-আধটু “পলিটিকালি আওএয়ার” ভাবতাম। লজ্জার ব্যাপার হলো যে নূর হোসেনের কথা প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম। তার গল্প ফিরে এলো পুরানো এক বন্ধুর মতো।
মানুষের স্রোতের মাঝে থমকে দারালাম। শরীরের উপর দিয়ে ঠান্ডা এক বাতাস বয়ে গেল এবং কোন কারণ ছাড়াই মনে এমন একটি অদ্ভুত চিন্তা এলো, “গণতান্ত্রিক সরকার গুলোর কাছেও কি তাহলে এলিটদের জীবনের মুল্যের চেয়ে সাধারণ মানুষের জীবনের মুল্য কম?”
তখন ছিল জোট-সরকারের দিন। বাতাসটা মনে হয় দিতে চাচ্ছিলো ভবিষ্যতের ঈঙ্গিত।
হাটতে হাটতে পৌছালাম এক চায়ের দোকানে। আমার বন্ধুরা হচ্ছে সম্পুর্ণ এ-পলিটিকাল। তাদের বলে লাভ নেই এই শব কথা। বলে লাভ নেই যে ছোটবেলার এক স্মৃতি এসে গুজেছে চায়ের কাপে। আরেকটি ভুলে যাওয়া গল্প, তবে এবার নিজের জীবন থেকে।
১৯৯০। ঢাকার মাঝে,মেইন রোড থেকে একটু দুড়ে এক গলির ভিতর দুই রুমের এক ফ্ল্যাটে থাকতাম আমরা। আম্মা খুব চিন্তিত, আব্বা চিন্তিত হলেও সেটা প্রকাশ পাচ্ছে না। মিছিল ও পট্কার শব্দ, গুলিও হতে পারে, কে জানে! রাত ঘনিয়ে আসলো, এবং কি এক খবর পেয়ে আমার আব্বা আমাকে নিয়ে গেলো তার সাথে সেই বাড়ীর ছাঁদে। তার ঘাঁরের উপর উঠিয়ে আমাকে দেখালো রাস্তা দিয়ে মানুষের স্রোত। দেখলাম অসঙ্খ্য মানুষ, দেখালাম অসঙ্খ্য মশাল। তারা যাচ্ছে মন্ত্রি-পাড়ার দিকে।
তখন ঠিক জানতাম না, তবে আজ জানি যে নূর হোসেনের সেই বাঁধ্ভাঙ্গা স্লোগান মুখে নিয়ে সেই মিছিল এগিয়ে গিয়েছিল। আজ জানি যে তার পরের ১৬ বছরে আমরা এলিটরা যেই ছোটখাটো অধিকারগুলো অর্জন করেছিলাম – যার শবচেয়ে বড় বহ্বিপ্রকাশ ছিল আমাদের গণমাধ্যমের স্বাধীনতা – তার পিছনে নূর হোসেনের মতো একজন “সাধারণ” মানুষের অবদান এলিটদের চেয়ে শতগুণ বেশী। ১৬ বছর ধরে সেই স্বাধীনতা উপভোগী অন্তত একটি সংবাদপত্রের নাম বলতে পারি, যারা আজ নূর হোসেন সম্পর্কে কোন নিউজ ছাপায়নি। অকৃতজ্ঞতা অনেক ধরণেরই আছে এই পৃথিবীতে।
আমি অকৃতজ্ঞদের একজন হতে চাই না। গত ১৬ বছরের কালো মেঘের মাঝে রোদের হালকা লুকোচুরির কথা মনে রেখে নূর হোসেনের জন্যে এই ছোট শ্রদ্ধাঞ্জলী।
6 comments:
Thank You so much. Excellent remembrance, excellent reminder.
And keep up the Bangla habit, didn't know your Bangla writing skill until now.
অনেক ভালো লিখেছেন ত! এখন থেকে বাংলাতেই লিখেন।
bhaijenera,
onek dhonnyobad apnader dujonke. Nishchoi cheshta korbo Banglay aro lekhar, once I get used to the typing and get back into the habit once more.
অপুর্ব সুন্দর একটা লেখা।
নুর হোসেইন এর প্রতি শ্রদ্ধা জানাই।
তবে সারাদিন ভেবেচিন্তে একটি সিদ্ধান্ত নিলাম : পোস্টটা করবো বাংলায় । এর পিছনে কারণটা নিজেও ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না। অনেকদিন ধরে বাংলায় লেখালেখি করি না। আশা করি বানান ও অন্যান্য ভুল শব মাফ করে দেবেন।
I would like to know what it is written in his back. but it is a pity that there isn't a translation.
Post a Comment